রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

قُمْ فَأَنذِرْ


بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ  
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ
قُمْ فَأَنذِرْ

১৭৫৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বছরের অধিক সময় ধরে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল সাম্রাজ্য একসময় মুসলমনাদের পদাতলে ছিলো, যদিও তারা এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু এবং দুর্বল ছিলো...

সেই মুসলমানেরা আল্লাহর দেওয়া মহান দায়িত্ব ভুলে গিয়ে গাফেল হয়ে ছিলো। বরং তারা নিজেরাই পীর-ফকির, কবর-মাযার, সূফীবাদ ও শীয়াদের ছড়ানো শিরকি-বিদাতি কর্মকান্ডে ডুবে ছিলো, যার প্রমান ততকালীন ইতিহাস ও সাহিত্য থেকে পাওয়া যায়। অন্যায়, পাপাচার আর জাহেলিয়াতে ডুবে থাকা মুসলমানদের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের উপর থেকে সাহায্য ও বিজয় সূর্যকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তাদের উপর দুর্ধর্ষ অত্যচারী বর্বর জাতি ইংরেজদেরকে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এতোদিন ক্ষমতাবঞ্ছিত হিন্দু ও শিখরা দেখলো এই সুযোগ, মুসলমানদেরকে পায়ের নিচে ফেলার। তারা দ্রুতগতিতে ইংরেজী ভাষা শিখে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্ধ অনুকরণ করে, ইংরেজদের দালালি করে সহজেই তারা ইংরেজদের নৈকট্য অর্জন করে নেয়। যার ফলে, এক সময় যারা প্রজা ও কর্মী ছিলো তারাই মুসলমানদেরকে হঠিয়ে জমিদারি ও ব্যবসায়ী হয়ে মুসলমানদের উপরে শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয় আর মুসলমানরা রাজক্ষমতা হারিয়ে সর্ব জায়গায় বঞ্চিত হতে লাগলো। মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়ভাবে একেবারে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিলো। ইংরেজ শাসনের বিরোধীতা করার কারণে হাজার হাজার আলেম ও মুসলমানদেরকে নির্দয়ভাবে ফাসি দেওয়া হয়েছিলো। মুসলমানদের লাশ শিয়াল-কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হতো, আলেমদেরকে অপমান করার জন্য তাদেরকে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হতো, নির্মম অত্যাচারের মুখে শুকরের গোশত খেতে বাধ্য করা হতো। আর এই কাজে তাদের সহযোগী হয়েছিলো হিন্দু, শিখ ও মারাঠারা।

আজকে সেই নামধারী মুসলমান সমাজের নারী-পুরুষেরা ইংরেজ রাজকন্যার বিয়ের ছবি দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে, ইংরেজ ফুটবলারে খেলা দেখার জন্য সারা রাত জেগে খেলা দেখে ফযর না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে, ইংরেজ নায়ক-নায়িকার চুলের কাটিং দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে, তাদের ড্রেস কেনার জন্য ঘুষ খেয়ে, সুদ খেয়ে, হারাম ইনকাম করে হাজার হাজার টাকা খরচ করে...আর তাদের সহযোগী এবং বর্তমানে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা হিন্দুদের টিভি চ্যানেল চলেনা, এমন ঘর হাজারে একটা খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ! হিন্দুদের মূর্তি পূজা আর নগ্নতার নাটক-সিনেমা ছাড়া আমাদের যুবকেরা প্রেম করা(!), মাস্তানি করা, হিরোইঞ্চি হওয়া শিখতে পারেনা, আমাদের বধূরা পাখী ড্রেস ছাড়া, হিন্দী সিরিয়াল দেখা ছাড়া স্বামীর ঘর করতে পারেনা, আমাদের সন্তানের হিন্দুদের কার্টুন না দেখে তাদের খাওয়া হয়না...

যাইহোক, অনেক নির্যাতন ও অপমানের পর প্রায় ২০০ বছর ধরে ইংরেজদের অত্যাচারের স্টিম রোলারের পর ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসনের অবসান হয়। পাকিস্থান ও বাংলাদেশের মানুষেরা বিজাতীয় আক্রমন থেকে কিছুটা নিরাপদ থাকলে ভারতের মুসলমানেরা আজ পর্যন্ত হিন্দুদের অত্যচার ও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি জালেমদের থেকে দেশ সেকুলার আওয়ামীদের খপ্পড়ে পড়ে। যাই হোক...১৯৭১ সাল বা তার পূর্ব থেকে আজ ২০১৪ সালে দেশ দুনিয়াবী শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থ-সম্পদ, ভোগ-বিলাসের দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। বিশাল জনগোষ্ঠী যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকলেও, এর দ্বারা দেশের অর্থনীতি বেগবান হয়েছে। পূর্বের থেকে বাঙ্গালীর অনেক ধনী হয়েছে...

কিন্তু
. দেশে ক্ষমতাসীনদের জুলুম, অত্যচার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে
. সাধারণ মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সীমা লংঘনকারী ও আল্লাহ্‌দ্রোহী হয়েছে
. প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নোংরামি এখন খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে
. নারীরা পাশ্চাত্য স্টাইলে নগ্ন পশু হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে
. খুন, ধর্ষণ, জিনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতির খবর দিয়ে পত্রিকার পাতা পূর্ণ হয়ে গেছে
. দেশের অধিকাংশ মানুষ বড় শিরক ও কুফুরীতে লিপ্ত
. অধিকাংশ মানুষের সাথে দ্বীনের সম্পর্ক নামকাওয়াস্তে, বরং বেশীরভাগই হচ্ছে বেনামাযী। সামান্য কিছু মানুষ যারা নামাযী তাদেরকে কবর-মাযার, সূফীবাদ, গণতান্ত্রিক রাজনীতি দিয়ে পথভ্রষ্ট করা হচ্ছে।
   
এমন অবস্থায় মানুষ যদি আমরা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে সংশোধন না করে নেই, এবং ইসলামের পথে ফিরে না আসি, হতে পারে আবার আমাদেরকে অপমানজনক কোন শাস্তি দেওয়া হবে। যেমনটা ক্বুরান ও হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে।

আমাদের করণীয় কি?
প্রত্যেকে নিজ ও এবং নিজ পরিবারের হেফাজতের জন্য জিম্মাদার। কিছু মানুষ থাকবেই যারা জাহান্নামের আগুন না দেখা পর্যন্ত কুফুরীকে ত্যাগ করবেনা। এরা যেমন রাসুল সাঃ এর যুগেও ছিলো, যাদেরকে দেখে রাসুল সাঃ অত্যন্ত ব্যথিত হতেন এবং আল্লাহ্‌ তাআলা এনিয়ে রাসুলকে সান্ত্বনা দিতেন...এ ধরণের অন্ধ, বধির, নামকাওয়াস্তে মুসলমান কিন্তু অন্তরে মুনাফেক এযুগেও আছে, যদিও তাদের নাম দেখে মুসলমান বলেই মনে হতে পারে। এদেরকে নিয়ে ব্যথিত হওয়ার কিছু নেই, অথবা এদের পেছনে সময় নষ্ট করার কিছু নেই। তবে মুসলমানদের মাঝে অনেকেই থাকে আত্মভোলা, বা শয়তান যাদেরকে ধোকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করেছে...আমাদের দায়িত্ব যথাসম্ভব উপায়ে তাদের কাছে ইসলামের বাণী পৌছে দেওয়া...

আমাদের দাওয়াতে যদি অন্তত একজন মানুষ ইসলামের মাঝে ফিরে আসে, এটা সারা দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ থেকেও কেয়ামতের দিন বেশী মূল্যবান হবে। ইসলামের বাণী, ক্বুরানের বাণী মানুষের মাঝে পৌছে দিন। মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানের চক্রান্ত উম্মতের কাছে তুলে ধরুন এবং তাদেরকে সতর্ক করুন। আল্লাহ্‌ তাঁর নবী সাঃ কে তাঁর নবুওতের জীবনের শুরুর দিকে আদেশ করেছিলেন,

উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম।
১. হে চাদরাবৃত!
২. উঠুন এবং মানুষদেরকে সতর্ক করুন,
৩. আপনি আপনার পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন,
৪. আর আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন
৫. এবং (শিরকের) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।

সুরাহ আল-মুদ্দাসসিরঃ ১-৫।